ঢাকা , বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ , ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ই-পেপার

শুভ জন্মদিন সাবিনা ইয়াসমিন

আপলোড সময় : ০৪-০৯-২০২৪ ০২:২৪:১৯ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০৪-০৯-২০২৪ ০২:২৪:১৯ অপরাহ্ন
শুভ জন্মদিন সাবিনা ইয়াসমিন
সঙ্গীতাঙ্গনের কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন। গানের পাখি বলা হয় তাকে। বাংলাদেশের গানের জগতের উজ্জ্বল এক নক্ষত্র তিনি। আজ ৪ সেপ্টেম্বর, বাঙালি ও বাংলাদেশের গর্ব বাংলা গানের জীবন্ত এই কিংবদন্তির জন্মদিন আজ। ৭০ পেরিয়ে ৭১ বসন্তে পা দিয়েছেন এই স্বর্ণঝরা কণ্ঠের অধিকারী। 

প্রায় চার দশক ধরে সংগীতের ভুবনে তার সগর্বে বিচরণ। উচ্চাঙ্গ ধ্রম্নপদ, লোকসংগীত থেকে আধুনিক বাংলা গানসহ চলচ্চিত্র মিশ্র আঙ্গিকের সুর- যেখানেই হাত দিয়েছেন সেখানেই যেন সোনা ফলেছে। শুধু দেশের গানেই তার যে অবদান, তা দিয়েই তিনি এ বাংলার বুকে বেঁচে থাকবেন যুগ যুগ ধরে।

১৯৫৪ সালের এই দিনে এক পারিবারিক সুরের আবহাওয়ায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পৈতৃক বাড়ি সাতক্ষীরায়। তার বাবা লুৎফর রহমান সরকারি চাকরি করলেও চমৎকার রবীন্দ্র সংগীত গাইতেন। মা মৌলুদা খাতুন মুর্শিদাবাদের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ কাদের বক্সের কাছে শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম নিয়েছিলেন। তার পরিবারের পাঁচ বোনের মাঝে চার বোনই গান করেছেন। তারা হলেন ফরিদা ইয়াসমিন, ফওজিয়া খান, নীলুফার ইয়াসমিন এবং সাবিনা ইয়াসমিন।

সাবিনা ইয়াসমিন ওস্তাদ পি সি গোমেজের কাছে একটানা ১৩ বছর তালিম নিয়েছেন। মাত্র ৭ বছর বয়সে স্টেজ প্রোগ্রামে অংশ নেন। ছোটদের সংগঠন খেলাঘরের সদস্য হিসেবে রেডিও ও টেলিভিশনে গান করেন নিয়মিত। ‘নতুন সুর’ ছবিতে প্রথম গান করেন তিনি শিশু শিল্পী হিসেবে। এরপর ১৯৬৭ সালে ‘আগুন নিয়ে খেলা’ এবং ‘মধুর জোছনা দীপালি’ গানটির মাধ্যমে তিনি প্লেব্যাক গায়িকা হিসেবে আত্ন প্রকাশ করেন। ছায়াছবিতে ১২ হাজারের মতো গান করছেন তিনি।

সাবিনা ইয়াসমিন গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ‘উল্কা’ সিনেমাতে অভিনয় করেছেন। তিনি ২০১০ সালে চ্যানেল আই সেরা কন্ঠ নির্বাচনে একজন বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সাবিনা ইয়াসমিন সংগীতে অবদানের জন্য ১৯৮৪ সালে একুশে পদক, ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার মোট ১৪টি, বাচসাস পুরস্কার মোট ৬টি, বিএফজেএ পুরস্কার লাভ করেন।

এছাড়া উত্তম কুমার পুরস্কার ১৯৯১ সালে, এইচ এম ভি ডাবল প্লাটিনাম ডিস্ক, বিশ্ব উন্নয়ন সংসদ থেকে সংগীতে ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রি লাভ করেছেন ১৯৮৪ সালে, ১৯৭৪ ও ১৯৭৫ সালে জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার, ১৯৭৫ সালে চলচ্চিত্র পূবাণী চলচ্চিত্র পুরস্কার, ১৯৯০ সালে শেরে বাংলা স্মৃতি পদক, ১৯৯২ সালে অ্যাস্ট্রোলজি পুরস্কার লাভ করেন। 

সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গানের মধ্যে ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো’, ‘আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো গন্ধ বিলিয়ে যাই’, ‘চিঠি দিও প্রতিদিন, চিঠি দিও’, ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’, ‘অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান’, ‘দুঃখ ভালবেসে প্রেমের খেলা’, ‘এ সুখের নেই কোন সীমানা’, ‘বরষার প্রথম দিনে’ ও ‘আমার ভাঙা ঘরে ভাঙা চালা’ উল্লেখযোগ্য।

তার দেশাত্মবোধক গানের মধ্যে ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো’, ‘সব ক’টা জানালা খুলে দাও না’, ‘ও আমার বাংলা মা’, ‘মাঝি নাও ছাড়িয়া দে’, ‘সুন্দর সুবর্ণ’ ও ‘একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতা’ উল্লেখযোগ্য।

জন্মদিন উপলক্ষে দেশের একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন এই ‘গানের পাখি’। তিনি বলেন, এবারের জন্মদিন নিয়ে বিশেষ কোনো পরিকল্পনাই নেই। বাসা থেকে কোথাও যাচ্ছি না। বাসাতেই সময় কাটবে আমার। এখন দেশের যে পরিস্থিতি, এ পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই আসলে জন্মদিন উদযাপনের আগ্রহ নেই। সময়টা অন্য রকম। এখন দেশ গড়ার সময়, নতুন করে দেশটা ঠিকঠাকভাবে গড়ে তোলার সময়। সবকিছু স্বাভাবিক হোক, তখন না হয় নিজের জন্মদিন উপলক্ষে কিছু একটা করা যেতে পারে। আপাতত সবার দোয়া চাই, আল্লাহ যেন সুস্থ রাখেন, ভালো রাখেন। আর সবাই যেন ভালো থাকেন নিজ নিজ পরিবারের সঙ্গে আমিও এ দোয়া করি।

কোকিলকণ্ঠী এই শিল্পী আরও বলেন, জন্মদিন এলেই আব্বা-আম্মা ও আমার বোনদের খুব মিস করি। কিন্তু তারপরও সবার ভালোবাসা পেয়ে আমি সে কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা করি। ঈদ এলে যেমন নতুন জামা-কাপড় লুকিয়ে রাখতাম, জন্মদিন এলেও তাই করতাম। জন্মদিনে এসব কাপড় বের করতাম। আনন্দটাই ছিল অন্য রকম। পরিবারের মধ্যকার সে আনন্দটা মিস করি।

বছরজুড়ে বিভিন্ন সময় তার গাওয়া দেশের গান আমাদের পুলকিত করে, অনুপ্রাণিত করে, আন্দোলিত করে। আর দেশের বিভিন্ন জাতীয় দিবসে তার গাওয়া দেশের গানই যেন আগামী দিনে নতুন করে পথচলার সাহস জোগায়। কিংবদন্তি এই শিল্পীর জন্মদিনে শুভেচ্ছা।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Matribhumir Khobor

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ